
সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ (কাজী নজরুল ইসলাম)। জাতীয় কবির ‘নারী’ কবিতার এই পঙক্তি বাংলা ব্যাকরণে ‘ভাব সম্প্রসারণ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সত্যিই দেশের নারীরা আগের চেয়ে অনেক দূর এগিয়েছে। নারীরা এখন সেনা-বিমান-নৌ বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর উচ্চপদে কাজ করছেন। বিমানের পাইলট থেকে শুরু করে ট্রেনের ড্রাইভার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, শিক্ষকতা সবখানেই নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। প্রশাসনে সচিব থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা কাজ করছেন। কর্মক্ষেত্রের সকল সেক্টরেই নারীর সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
মাঠ প্রশাসনে দক্ষতার সঙ্গে নারীরা তৃণমূলে যেমন কাজ করছেন, তেমনি রয়েছেন প্রশাসনের শীর্ষ পদেও। জনপ্রশাসনে, পুলিশ ও বিচার বিভাগে সরকারি চাকরিতে নারীদের অবস্থান দিন দিন আরো সংহত হচ্ছে। শুধু বর্তমানে সারা দেশে ৪৯২ ইউএনওর মধ্যে ১৭৭ জন নারী। ৬৪ জেলা প্রশাসকের মধ্যে ১৮ জন নারী ডিসি এবং ৮১ সচিবের মধ্যে ১৪ জন নারী সচিব দায়িত্ব পালন করছেন।
বিশ্বখ্যাত পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৮ জন পুরুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাশাপাশি একমাত্র নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী। ৩৫ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এই নারী কর্মকর্তা ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর উপজেলায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
যোগদানের পর পরই বিভিন্ন শিক্ষাংগনে আন্দোলন প্রশমন করে সংশিষ্ট সকলের সহযোগিতার শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সর্বমহলের আস্থা অর্জন করেছেন। এছাড়াও কক্সবাজার সদর উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন সহ মাদকের কুফল, মোবাইল আসক্তি দূরকরন ও বাল্যবিবাহরোধে নিয়মিত সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি খেলাধুলা ও এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহন বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা,শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলার অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ ঘুরে দেখা যায়,পরিবেশ সুরক্ষায় অনন্য ভুমিকা পালন করে চলেছেন। পাহাড়,টিলা কাটা,অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করেছেন। এমনকি অবৈধভাবে কৃষি জমির টপ সয়েল কাটার দায়ে মধ্যরাতেও অভিযান পরিচালনা করার জন্য তিনি একজন অদম্য ও সাহসী নারী কর্মকর্তা হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত লাভ করেছেন।
ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর, তিনি প্রতিটি দপ্তরের সাথে আলোচনা শুরু করেন এবং জনসেবার মানোন্নয়নে কাজ করেন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে যান এবং গড়ে তোলেন একটি দক্ষ “টিম সদর উপজেলা”। তার নেতৃত্বে প্রতিটি টিম সদস্য অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক, ঝিলংঝা ইউনিয়ন ও চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রায় অর্ধ শতাধিক স্কুল ও মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে সদা হাস্যোজ্জল ও প্রচারবিমুখ এবং বিনয়ী ভাষার এই নারী কর্মকর্তা সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জানান, এতগুলো দায়িত্ব পালন করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অতিরিক্ত সময় দিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী সহ উপজেলা প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কক্সবাজার জেলার শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন স্যারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় কক্সবাজার সদর উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জনসাধারনের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ননারী ও কন্যার উন্নয়ন’ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য। শুধু মাঠ প্রশাসনে নয়, এখন প্রশাসনের নানা স্তরে নারীর অবস্থান বাড়ছে, সুসংহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রাস্ট্রের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষের সচতেনতাও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। নারীদের জন্য কর্মপরিবেশও ভালো হয়েছে, তবে কর্মপরিবেশ বিশেষ করে চাকরিজীবী মা-বাবার কথা বিবেচনা করে কর্মক্ষেত্রে উন্নত মানের ডে-কেয়ার আরো বৃদ্ধি করা, নারীর জন্য উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পুরুষদের প্রথাগত মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনতা তৈরিসহ আরো কিছু কাজ করলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আরো সুসংহত হবে বলে মনে করেন সুশীল সমাজ। প্রশাসনে নারীর অবস্থান বাড়লে তা নানা ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।
পাঠকের মতামত